প্রেক্ষাপট
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমান বন্দরের সড়কে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজিব ও দিয়া সড়ক হত্যার শিকার হলে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। সেসময় যৌক্তিক ০৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলনকারীদের সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ০৬ বছরের বেশি সময় অসংখ্য যৌক্তিক ও জনবান্ধব দাবিতে রাজপথে ছিল সংগঠনটি। সর্বশেষ ২৪ এর স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানেও নিসআ অন্যতম সাহসী ভূমিকা পালন করেছে।
দীর্ঘ এ লড়াই সংগ্রামে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিল একদল অদম্য তরুণ। নিসআ কেন্দ্রীয়ভাবে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল। তবে যৌক্তিক দাবি আদায়ের সংগ্রাম আরও জোরদার করতে এবং সাংগঠনিক বিকাশের লক্ষ্যে সাংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার প্রেক্ষিতে আগামী ২২ নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) এর প্রথম জাতীয় কাউন্সিলের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
প্রথম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন যে দায়িত্ব পালন করবে:
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ও ক্ষমতা:
১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা।
২. ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও প্রকাশ।
৩. প্রার্থীর যোগ্যতা ও আচরণবিধি নির্ধারণ।
৪. প্রার্থিতা যাচাই।
৫. নির্বাচনী অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণ।
৬. ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার পদ্ধতি নির্ধারণ ও প্রয়োগ।
সর্বোপরি একটি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা।
তফসিল সংক্রান্ত সময়সূচি:
১. নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা: ১৫ নভেম্বরে, ২০২৪ ইং
২. ভোটার তালিকা প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ইং
৩. মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ: ১৬ থেকে ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ইং
৪. মনোনয়ন পত্র জমা: ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ইং
৫. প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ইং
৬. মনোনয়ন পত্র সংক্রান্ত অভিযোগ দাখিল ও নিষ্পত্তি: ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ইং
৭. প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ: ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ইং
৮. প্রার্থীদের নির্বাচনী বিতর্ক: ২০ নভেম্বর, ২০২৪ ইং
৯. ভোট গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ: ২২ নভেম্বর, ২০২৪ইং (শুক্রবার)
তফসিল ঘোষণা ও ভোটার তালিকা প্রণয়ন:
সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করবেন।
যারা ভোটার হবেন:
- সকল স্থায়ী সদস্য (সদস্য প্রতি দুটি ভোট), কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্য, সকল কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি সমূহের প্রধান তিনজন [১ম কাউন্সিলে বিশেষ বিবেচনায়], জেলা ও সমমর্যাদার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার দায়িত্বশীল।
- একই ব্যক্তি একাধিক পদে (কেন্দ্রে ও শাখায়) থাকলে সে ভোটার তালিকায় একবারই তালিকাভুক্ত হবে।
নির্বাচনী আচরণবিধি:
১. প্রত্যেক প্রার্থী শুধু একটি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। নির্বাচনে কোনো প্রার্থী প্যানেল ঘোষণা বা প্যানেল ভিত্তিক প্রচারণা চালানো যাবে না।
২. প্রার্থীগণ মুদ্রিত ব্যানারে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন। অফলাইন ও অনলাইন প্লাটফর্মে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) ভোট চেয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন। পোস্টারে প্রার্থী ব্যতীত অন্য কারও ছবি ব্যবহার করতে পারবে না।
৩. অফলাইন/অনলাইনে প্রচারণার ক্ষেত্রে শুধু সংগঠন নিয়ে নিজের পরিকল্পনা ও ইশতেহার তুলে ধরা যাবে। তবে কোনো প্রার্থী বা তার সমর্থক অনলাইনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্য কোনো প্রার্থীকে হেয় প্রতিপন্ন করে বা প্রার্থীর প্রতি বিদ্রুপ, কুৎসা রটনামূলক, উস্কানিমূলক, মানহানিকর বক্তব্য বা বিবৃতি, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে প্রচারণা করতে পারবেন না।
৪. তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রার্থীগণ বা প্রার্থীর মনোনীত ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন। ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং বিকাল ০৩ ঘটিকার পর সমস্ত প্রচারণা বন্ধ থাকবে।
৫. স্থায়ী সদস্য, নির্বাচন পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং একজন প্রার্থীর হয়ে অন্য কোন প্রার্থী (একই পদে কিংবা ভিন্ন পদে) প্রচারণা চালাতে পারবে না।
৬. প্রার্থী/এজেন্ট (সর্বোচ্চ একজন) নির্বাচনকালে শুধু ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
৭. প্রার্থী বা তার সমর্থকগণ কোনো প্রকার সভা, সমাবেশে আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না।
৮. এই আচরণবিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ শুধু নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে বা ই-মেইলের মাধ্যমে দেওয়া যাবে। গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অভিযোগ শেয়ার করা যাবে না।
৯. কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে উক্ত ব্যক্তির প্রার্থীতা বাতিলসহ যেকোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনার গ্রহণ করতে পারবেন।
ভোটগ্রহণ ও ফলাফলের পদ্ধতি:
- নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত স্থান (কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ফার্মগেট, ঢাকা) ও সময়ে (সকাল ৮:৩০ টা থেকে দুপুর ১২ টা) ভোটারগণ স্বশরীরে উপস্থিতি হয়ে ভোট দিতে পারবেন। একজন ভোটার সর্বোচ্চ একবারই তিনটি পদের বিপরীতে তিনটি ভোট দিতে পারবেন (স্থায়ী সদস্যদের ক্ষেত্রে তিনটি পদের বিপরীতে ছয়টি ভোট)।
- কোন ভোটার যদি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে ভোটের দিন দেশের বাহিরে (প্রবাসে) বা গুরুতর অসুস্থতায় হাসপাতালে অবস্থান করলে সেক্ষেত্রে যথোপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে উক্ত ভোটার অনলাইনে (সাংগঠনিক ই-মেইল) ভোট দিতে পারেন। ভোটার ভোটের নির্ধারিত তারিখ এর পূর্বে সকল প্রমাণাদি নির্বাচন কমিশনকে ই-মেইল এর মাধ্যমে দাখিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশন তাকে পরবর্তী পদক্ষেপ জানিয়ে দিবেন।
- ভোট গ্রহণের পর নির্বাচন কমিশন বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব ফলাফল ঘোষণা করবেন। ফলাফলে প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যায় উল্লেখ থাকবে। নির্বাচনী ফলাফল অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের প্রত্যেক সদস্য কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে।
যে সকল পদের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে:
- সভাপতি – ০১ জন
- সাধারণ সম্পাদক – ০১ জন
- সাংগঠনিক সম্পাদক – ০১ জন
প্রার্থীর যোগ্যতা:
- অবশ্যই তালিকাভুক্ত ভোটার হতে হবে,
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: ন্যূনতম এইচ.এস.সি পাশ,
- বয়স: ন্যূনতম ২১ বছর।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া
- নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফি প্রদান পূর্বক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। সভাপতি ২০২৪ টাকা, সাধারণ সম্পাদক ২০২৪ টাকা, সাংগঠনিক সম্পাদক ২০১৮ টাকা।
- প্রার্থী নিজে কিংবা প্রার্থীর পক্ষে যে কোন ভোটার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো নিয়ম পরিবর্তন বা পরিমার্জনের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নিকট অর্পিত।
অনুমোদনক্রমে, মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, প্রধান নির্বাচন কমিশনার; মো: শাখাওয়াত হোসেন (রাতুল সরকার), নির্বাচন কমিশনার; আফিয়া নোশিন বৃষ্টি, নির্বাচন কমিশনার।
5 Comments